সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ (Dearness Allowance) নিয়ে ফের চাপে রাজ্য সরকার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দিষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ পরিশোধ না করে বরং ছয় মাস সময় চেয়ে আবেদন করেছে নবান্ন। একদিকে আদালতের রায় অমান্য, অন্যদিকে কর্মচারী ইউনিয়নগুলির হুমকি—বিধ্বস্ত আর্থিক পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে জটিল সমীকরণে জড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
কী বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট?
চলতি বছরের ১৬ মে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট, ৬ সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ₹১০,৪০০ কোটি টাকা মিটিয়ে দিতে হবে। এই নির্দেশ কার্যকর করার সময়সীমা শেষ হয় ২৭ জুন। কিন্তু সেই সময়সীমার মধ্যেও কোনও অর্থ মিটিয়ে দেওয়া হয়নি।
রাজ্যের যুক্তি কী?
সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের তরফে একটি Special Leave Petition (SLP) দাখিল করে সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়েছে যে, তারা এই মুহূর্তে আর্থিক সঙ্কটে রয়েছে। কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রায় ₹১.৮ লক্ষ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা থাকার কারণেই ডিএ পরিশোধ সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি, রাজ্যের সামগ্রিক ঋণের পরিমাণ ইতিমধ্যেই ছুঁয়েছে ₹৭.০৬ লক্ষ কোটি। এই পরিস্থিতিতে একসাথে ₹১০,০০০ কোটির মতো ব্যয় বহন করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় বলেই দাবি করা হয়েছে।
ধার করে চালানোর পরিকল্পনা!
সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, তারা ₹৪,৩০০ কোটি টাকা ধার নিয়ে কিছুটা পরিশোধের চিন্তাভাবনা করছে। তবে তা আদৌ কবে হবে বা আদায়যোগ্য কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপে প্রশ্ন তুলছে কর্মচারী সংগঠনগুলি।
ইউনিয়নের হুঁশিয়ারি: আদালত অবমাননার মামলা
State Government Employees’ Confederation-এর তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্য ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতের রায় পালন করছে না। এই পরিস্থিতিতে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ তুঙ্গে। বহু বছর ধরে বঞ্চনার অভিযোগ তো রয়েইছে, এবার আদালতের রায় সত্ত্বেও রাজ্য পিছু হঠায় অখুশি সরকারি কর্মীরা।
ডিএ কি বাধ্যতামূলক?
এখানেই মূল আইনি বিতর্ক। রাজ্য সরকারের দাবি, ডিএ বাধ্যতামূলক নয়, বরং এটি সরকারের বিবেচনার উপর নির্ভর করে। তা মূল বেতনের অংশ না হওয়ায় কেন্দ্রীয় হারে ডিএ না দেওয়া গেলেও আদালত বাধ্য করতে পারে না—এই যুক্তিতেই সুপ্রিম কোর্টের কাছে ৬ মাস সময় চাওয়া হয়েছে।
রাজনীতি বনাম বাস্তবতা
সরকারের এই অবস্থানে রাজনৈতিক তরজাও চলছে। বিরোধীদের মতে, রাজ্য চেয়েছিল আদালতের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজস্ব খরচের অজুহাতে বেতন খাতে খরচ না করতে। তবে সরকারি শিবিরের বক্তব্য, Centre vs State অনুদান নিয়ে টানাপোড়েনের জন্যই দেরি হচ্ছে। এখন দেখার, সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের ছয় মাস সময় চাওয়া মঞ্জুর করে কি না।