West Bengal : মুর্শিদাবাদ ও মহেশতলায় পরপর গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা। দুটি ঘটনাই যেন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বিজেপি এই ঘটনাগুলিকে হাতিয়ার করে সরকারকে চাপে ফেলতে চেয়েছে। তবে স্পিকার আলোচনার অনুমতি না দেওয়ায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভা চত্বর।
জোড়া মুলতুবি প্রস্তাব বিজেপির, স্পিকারের খারিজ
বিধানসভার অধিবেশনে আজ বিজেপি মুর্শিদাবাদ ও মহেশতলায় সংঘর্ষের প্রসঙ্গ তুলে দুটি পৃথক মুলতুবি প্রস্তাব পেশ করে। বিজেপির তরফে দাবি করা হয়, রাজ্যে একের পর এক গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা প্রমাণ করছে প্রশাসনের ব্যর্থতা। তাই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। তবে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এই দাবিকে নস্যাৎ করে দেন। তিনি বলেন, “এটি মুলতুবি প্রস্তাবের যোগ্য নয়। আলাদা করে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে না।” এর পরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর দল।
ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ বিজেপি বিধায়কদের
স্পিকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বিজেপি বিধায়করা বিধানসভার ওয়েলে নেমে পড়েন। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। বিধানসভার কার্যপ্রণালী কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলা এই বিক্ষোভে শুভেন্দু অধিকারী নিজেও অংশ নেন। তিনি বলেন, “রাজ্যে শাসকদলের মদতে একের পর এক হিংসা চলছে। বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে।”
রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপের দাবি
বিধানসভায় তাদের দাবিকে গুরুত্ব না দেওয়ায়, পরে বিজেপি বিধায়করা দলবদ্ধভাবে চলে যান রাজভবনে। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শুভেন্দু অধিকারীরা এই দুটি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন। রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তাঁরা। অভিযোগ তোলেন, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে হিংসা নিয়ে মুখ বুজে আছে। শুভেন্দুর অভিযোগ, “মুর্শিদাবাদে দু’পক্ষের সংঘর্ষে রক্ত ঝরছে। মহেশতলাতেও আতঙ্কের পরিবেশ। অথচ প্রশাসন নীরব দর্শক। রাজ্যপালের উচিত বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া।”
তৃণমূলের পাল্টা তোপ
বিজেপির এই আন্দোলনকে নাটক বলে কটাক্ষ করেছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। বিধানসভার বাইরে সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “এই ধরনের স্থানীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে বিধানসভা স্তব্ধ করা অনভিপ্রেত। বিজেপির একমাত্র কাজ হল হইচই করা ও মিথ্যে প্রচার।”
রাজনীতি নাকি বাস্তব আশঙ্কা?
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একাধিক জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনা এবং প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া না থাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। মুর্শিদাবাদ ও মহেশতলার ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন বলেও খবর। পুলিশের তরফে যদিও জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে এবং তদন্ত চলছে।
এই দুটি সংঘর্ষের ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। পাশাপাশি, বিধানসভা থেকে রাজভবন— বিজেপির কৌশল রাজনৈতিক চাপ তৈরির। আগামী দিনে এই ইস্যু আরও জোরদার হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। প্রশ্ন একটাই— হিংসার রাজনীতি রুখবে কে?