India Bangladesh Border : শুক্রবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল বাদুড়িয়ার সীমান্তবর্তী এক গ্রাম। হঠাৎ করেই গ্রামবাসীরা দেখতে পান, অচেনা কয়েকজন মানুষ গোপনে গ্রামের মধ্য দিয়ে চলাফেরা করছেন। সন্দেহ হওয়ায় তাঁদের ঘিরে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন স্থানীয়রা।
অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে বাংলার সীমান্ত, তারপর বাংলাদেশ—এক ‘পথ’ বেছে নিয়েছিল দলটি
ধৃতরা জানায়, তারা সবাই মায়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থী। অন্ধ্রপ্রদেশে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছিল তারা। তবে সেখানে আইনি অবস্থান দুর্বল হয়ে যাওয়ায় দলটি বাংলাদেশে পালাতে চেয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার সীমান্ত ধরে চুপিচুপি বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার।
স্থানীয়দের তৎপরতায় ভেস্তে গেল গোপন ছক
গ্রামবাসীদের নজরদারি ও বুদ্ধিমত্তার কারণেই পরিকল্পনা সফল হয়নি। গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয়দের। বিষয়টি জানাজানি হতেই কয়েকজন যুবক তাদের অনুসরণ করেন। শেষ পর্যন্ত যখন বোঝা যায় তারা বাইরের মানুষ, সঙ্গে কোনও বৈধ নথিপত্র নেই, তখনই ধরে ফেলা হয় ওই ২২ জনকে।
চাপের মুখে মুখ খুলল রোহিঙ্গারা
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা স্বীকার করেন যে তারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, অন্ধ্রপ্রদেশে তাঁরা কাজ করতেন নির্মাণ শ্রমিক বা দিনমজুর হিসেবে। কিন্তু সম্প্রতি সেখানকার প্রশাসনের নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা পালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
পুলিশ ও বিএসএফ নড়েচড়ে বসেছে
ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় স্থানীয় থানা এবং সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (BSF)। ধৃতদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, তাঁদের কাছে কোনও দালাল চক্রের নাম উঠে আসে কি না তা জানার চেষ্টা করছে প্রশাসন। পাশাপাশি, কীভাবে তারা এতটা পথ পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এল, তার খোঁজও নেওয়া হচ্ছে।
সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
এই ঘটনায় ফের একবার প্রশ্ন উঠছে ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কেবল অন্ধ্রপ্রদেশে আশ্রয় নিয়েই থেমে থাকেননি, একপ্রকার সুপরিকল্পিতভাবে বাংলার সীমান্ত ব্যবহার করে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন—এটা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
গ্রামবাসীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ পুলিশ প্রশাসন
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, “যদি গ্রামবাসীরা তৎপরতা না দেখাতেন, তাহলে এই দল সহজেই সীমান্ত পেরিয়ে যেত। সাধারণ মানুষের সতর্কতা ও সচেতনতা খুব গুরুত্বপূর্ণ এই ধরনের পরিস্থিতিতে।”
কী হবে পরবর্তী পদক্ষেপ?
ধৃতদের বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্ট এবং অন্য বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী মামলা রুজু হতে পারে। তাঁদের আইনি সহায়তা ও কনসুলার অ্যাক্সেস দেওয়ার বিষয়টিও দেখছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রুখে দেওয়া যায়।
রোহিঙ্গা সমস্যাটি আন্তর্জাতিক স্তরের হলেও, এর প্রভাব এখন আর শুধু সীমাবদ্ধ নয়। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও গোপন পালানোর চেষ্টায় বাড়ছে নিরাপত্তার ঝুঁকি। বাদুড়িয়ার ঘটনার মতো প্রতিটি সতর্কতা ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষণীয় হয়ে উঠছে।