বন্যার জলে ভাসছে স্বপ্ন! সুবর্ণরেখার জলে মিশে গেল ভবিষ্যতের এক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্ভাবনা। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নদীর জলস্তর হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় ভেসে গেল আইআইটি খড়্গপুরের গবেষকদের তৈরি করা ভাসমান ঘর সহ সমস্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের যন্ত্রপাতি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি ব্লকের আমলাসাই অঞ্চলে গবেষণা চলছিল এই বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে। উদ্দেশ্য ছিল, নদীর গতিপথ কাজে লাগিয়ে পরিবেশবান্ধব এবং খরচসাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন। কিন্তু আচমকা বেড়ে ওঠা সুবর্ণরেখার জলস্রোত সব পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেয়।
ভাসতে ভাসতে পৌঁছয় রাউতরাপুরে
আইআইটি খড়্গপুরের ওশান ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নেভাল আর্কিটেকচার বিভাগের গবেষক ও এই প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা ওঙ্কার ভেঙ্কটাইয়াল্লা জানান, আমলাসাইয়ে নির্ধারিত স্থানে প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ও ভাসমান ঘর স্থাপন করা হয়েছিল পরীক্ষামূলকভাবে। কিন্তু গভীর রাতে নদীর হঠাৎ জলবৃদ্ধিতে সেটি ছিঁড়ে ভেসে যায়। পরদিন সকালে খবর আসে, দাঁতনের রাউতরাপুরে ভেসে এসেছে সেটি। তিনি আরও বলেন, “মূল কাঠামো এবং ইকুইপমেন্ট মিলিয়ে অন্তত দু’ থেকে আড়াই লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এমন ঘটনা প্রথমবার ঘটল। এখন সবকিছু উদ্ধার করেই আবার নতুন করে পরিকল্পনা সাজাতে হবে।”
বন্যা রুখতে প্রস্তুতি ছিল না
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গালুডির জল ছাড়ার ফলে নদীর জলস্তর আশাতীতভাবে বেড়ে যায়। যদিও বর্ষাকালীন সময়ে এমনটা আগেও হয়েছে, কিন্তু গবেষণা প্রকল্পের এমন ক্ষতি এই প্রথম। বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীর প্রকৃত গতি ও আচরণ না বুঝে এধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে আরও সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।
পুনরায় শুরু করার আশ্বাস গবেষকদের
অন্তত পাঁচজন গবেষক এই প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন। পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও গবেষকদের আশা, এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও শক্ত ভিত্তিতে কাজ শুরু হবে। ওঙ্কার জানান, “তথ্য সংগ্রহের কাজ আমরা শুরু করেছিলাম। এখন নতুনভাবে ভেবে আরও উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে আবার চালু করব প্রকল্পটি।”
পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ কি পাবে?
এই প্রকল্প সফল হলে রাজ্যের নদীভিত্তিক এলাকাগুলিতে স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিক খুলে যেতে পারত। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ গবেষণার পথ আটকে দিল। এখন দেখার, প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠান কতটা সহায়তা করে পুনর্গঠনের পথে।