“আপনারা পরিশ্রম করেন, ঘর ছেড়ে দেশের নানা প্রান্তে যান, আর বদলে আপনাদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দেওয়া হয়”—এভাবেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে বিতর্কিত তকমা নিয়ে সরব হন তিনি। মমতার বক্তব্যে স্পষ্ট ক্ষোভ—বাংলা থেকে যাঁরা জীবিকার খোঁজে অন্য রাজ্যে যান, তাঁদের ‘বিদেশি’ হিসেবে দেগে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বেশ কিছু ক্ষেত্রে পুলিশি হয়রানির মুখেও পড়তে হচ্ছে তাঁদের। তিনি অভিযোগ করেন, পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও অনেককে বাংলাদেশি বলা হচ্ছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “এই বাংলার শ্রমিকরা পরিশ্রম করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘাম ঝরাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদেরকেই কিছু জায়গায় বাংলাদেশি বলে অপমান করা হচ্ছে। এটা শুধুই বাংলার মানুষকে অপমান করার এক ষড়যন্ত্র।” তিনি আরও বলেন, রাজনীতির স্বার্থে একটি বিশেষ গোষ্ঠী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বাংলার মানুষকে আলাদা চোখে দেখতে চাইছে। এর নেপথ্যে রয়েছে বিভাজনের রাজনীতি, যার মূল লক্ষ্য বাংলার সম্মান ক্ষুন্ন করা।
কেন্দ্রীয় শক্তির প্রতি ইঙ্গিত?
যদিও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে সরাসরি কোনও দলের নাম নেননি, তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, তাঁর মন্তব্য মূলত কেন্দ্রীয় শাসকদলের দিকেই ইঙ্গিত করছে। বিভিন্ন সময়ে বিজেপির তরফে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে নানা অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেই আবহেই এই অভিযোগের গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছে।
মমতা জানান, তিনি বাংলার মানুষের সঙ্গে থাকবেন। তিনি বলেন, “আমি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। আমার দায়িত্ব বাংলার মানুষের সম্মান রক্ষা করা। যাঁরা বাইরে কাজ করতে যান, তাঁরা গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলুন। কোনও অপমান সহ্য করা হবে না।” তিনি আরও বলেন, যদি কেউ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও হয়রানির শিকার হন, তবে রাজ্য সরকার তাদের পাশে দাঁড়াবে। প্রয়োজনে আইনি সহায়তাও দেওয়া হবে।
রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরে তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া জানায় বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, রাজ্য সরকার সঠিক তথ্য না দিয়ে আবেগের রাজনীতি করছে। তবে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, এই প্রসঙ্গে রাজনীতির বদলে মানুষের সম্মান ও অধিকারই মুখ্য। এই বিতর্কের আবহে বাংলা থেকে অন্য রাজ্যে পাড়ি দেওয়া লক্ষাধিক শ্রমিকের নিরাপত্তা ও সম্মানের প্রশ্ন আবারও সামনে চলে এল। মমতার বার্তা স্পষ্ট—বাংলার মানুষকে অসম্মান করলে তা আর চুপচাপ মেনে নেওয়া হবে না।