সপ্তাহের শুরুতে, যখন গোটা শহর ব্যস্ত কর্মজীবনে, সেই সময়েই ঘটে গেল এক আকস্মিক দুর্ঘটনা বারাসাত স্টেশনের ১১ নম্বর রেলগেটে। সোমবার বিকেল চারটে নাগাদ একটি পিকআপ ভ্যান এসে ধাক্কা মারে রেলগেটে। ধাক্কা এতটাই জোরালো ছিল যে গেটটি সম্পূর্ণভাবে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এই ঘটনায় মুহূর্তেই রেল লাইনের আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। থমকে যায় যান চলাচল। পথচারীদের মধ্যে তৈরি হয় চাঞ্চল্য। অনেকে রীতিমতো দৌড়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যান।
পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে, আটক ভ্যান ও চালক
দুর্ঘটনার খবর পৌঁছতেই বারাসাত থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ভ্যানটিকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চালক সম্ভবত গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। তবে অতিরিক্ত গতি, চালকের অসতর্কতা—দুটিই এখন পুলিশের তদন্তের আওতায়। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “ভ্যানটি রেলগেট পড়ার সময়ও থামেনি। চালক গেট পড়ার সঙ্কেত উপেক্ষা করেন। সেটাই মূল সমস্যা।”
তীব্র যানজটে ভোগান্তি চরমে
দুর্ঘটনার জেরে দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকে যান চলাচল। অফিসফেরত মানুষ, স্কুলপড়ুয়া, অ্যাম্বুল্যান্স—সবাই এই যানজটে আটকে পড়েন। রেলগেট ভাঙার পর ট্র্যাফিক সামাল দিতে হিমশিম খায় পুলিশ। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে অবরুদ্ধ ছিল বারাসাতের গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ সংলগ্ন রাস্তা। এক পথচারী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “এমন গাফিলতি হলে তো বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে! একটা গাড়ির জন্য পুরো শহর থেমে গেল।”
রেলের তরফে অস্থায়ী ব্যবস্থা, সারানো হবে গেট
রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই রেলের মেনটেন্যান্স দল ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। আপাতত অস্থায়ী ব্যারিকেড বসিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। স্থায়ীভাবে রেলগেট সারানোর কাজ শুরু হবে রাতেই। তবে তা সম্পূর্ণ হতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন রেল আধিকারিকরা।
কী হতে পারত, ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়
ঘটনায় কেউ আহত না হলেও, “যদি ওই সময় ট্রেন চলে আসত!”—এই আশঙ্কা থেকেই আঁতকে উঠেছেন স্থানীয়রা। বহু মানুষেরই বক্তব্য, গেট পড়ার পরও গাড়ি থামায়নি—এ যেন একটি মারাত্মক ট্র্যাজেডির মুখ থেকে ফিরে আসা। রেললাইনের ধারে দোকান চালানো এক ব্যক্তি বলেন, “প্রতিদিন এখানে প্রচুর লোক চলাফেরা করে। আজ ভাগ্য ভালো ছিল, নয়তো বড় দুর্ঘটনা হতো।”
সচেতনতা ও নজরদারি জরুরি
বারাসাতের এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল, রেলক্রসিংয়ে যানবাহনের নিয়ম না মানা কতটা বিপজ্জনক। প্রশাসন যেমন কঠোর হবে, তেমনই নাগরিকদেরও দায়িত্ববান হতে হবে। একটু অসতর্কতা মানে হতে পারে অসংখ্য প্রাণের ঝুঁকি।