দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলী বিধানসভার মইপিট বৈকুন্ঠপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শনিবারের বাজার এলাকা। এখানে একদিকে ছিমছাম গ্রামজীবন, অন্যদিকে চোখে পড়ছে এক ভয়ংকর প্রবণতা—সরকারি খালের ওপর গজিয়ে উঠছে একের পর এক পাকা কংক্রিটের ঘর। যেখানে খাল দিয়ে জল যাওয়ার কথা, সেখানে এখন জমি বুজিয়ে ঢালাই, আর তার ওপর দাঁড়িয়ে পাকা নির্মাণ! গ্রামবাসীরা রীতিমতো হতবাক।
অনুমোদন নেই, তবু অবলীলায় চলছে নির্মাণ
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোনওরকম সরকারি অনুমোদন ছাড়াই খালের বুকেই নির্মাণ শুরু হয়েছে। দিনের আলোয়, সবার চোখের সামনেই তৈরি হচ্ছে এইসব অবৈধ কাঠামো। অথচ কেউ বাধা দিচ্ছে না। খালটি আগে বর্ষায় এলাকার জল বের করে দিত, চাষের জমি বাঁচাত। কিন্তু এখন সেই খালই যদি দখল হয়ে যায়, তাহলে কোথায় যাবে জল? আশঙ্কা, একটু বৃষ্টি হলেই ডুবে যাবে এলাকা।
“আমরা চোখের সামনে দেখছি, তবু প্রশাসন চুপ!”
ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বহু গ্রামবাসী। তাঁরা বলছেন, “দিনের পর দিন খালের ওপর পাকা ঘর উঠছে। আমরা দেখেও কিছু করতে পারছি না। বারবার থানায় জানিয়েছি, বিডিও অফিসেও জানিয়েছি, কিন্তু কেউ শোনেনি।”তাঁদের প্রশ্ন—“সাধারণ মানুষ একটা ঘরের অনুমতি পেতে বছর কেটে যায়। আর এখানে সরকারি খালের ওপর এইভাবে ঘর তুলছে কেউ, আর কেউ কিছু বলছে না?”
প্রশাসন-পুলিশের নীরবতায় প্রশ্ন
এই ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা। পুলিশ, বিডিও অফিস, পঞ্চায়েত—সব পক্ষই যেন নির্বিকার। কেউ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেই অভিযোগ। কেউ কেউ বলছেন, রাজনৈতিক আশ্রয় না থাকলে এইরকম দখলদারি সম্ভব নয়। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষের মনে তৈরি হয়েছে গভীর অসন্তোষ। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও উঠছে বড় প্রশ্ন।
প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্টের আশঙ্কা
স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা জানাচ্ছেন, খাল দখলের এমন প্রবণতা খুবই ভয়ঙ্কর। এতে যেমন জলের স্বাভাবিক প্রবাহ থমকে যাচ্ছে, তেমনই ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। ফলে চাষের ক্ষতি, জমিতে জল জমা, এমনকি এলাকায় ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে।
এলাকাবাসীর আবেদন: “দয়া করে ব্যবস্থা নিন”
সবশেষে, এলাকাবাসীর আবেদন একটাই—সরকার যেন অবিলম্বে এই বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করে, খাল পরিষ্কার করে প্রকৃত অবস্থায় ফিরিয়ে আনে, না হলে আগামী বর্ষায় ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে বলেই তাঁদের আশঙ্কা।