কালনার বাসিন্দাদের কাছে ভাগীরথী নদী শুধুই নদী নয়—এটি তাঁদের দৈনন্দিন যাতায়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু। কিন্তু বুধবার সকাল থেকেই সেই নদীই যেন আতঙ্কের নাম। খেয়াঘাটের ঠিক পাশেই, নদীর জলে একটি বিশালাকৃতির কুমির ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। প্রথমে এক নৌচালক সেটি চোখে পড়তেই চিৎকার করে উঠলে চারিদিকে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক
যাত্রীরা কেউ তখনই নৌকা থেকে নেমে পড়েন, কেউ আবার নদী পার হওয়া বাতিল করেন। খেয়াঘাটের আশেপাশে জড়ো হয় অনেকে। প্রত্যক্ষদর্শী এক নৌচালক বলেন,“আমি নিজের চোখে দেখেছি। জল ফুঁড়ে একবার উঠে এল, আবার মিলিয়ে গেল। যদি যাত্রী থাকাকালীন আক্রমণ করত, ভাবতেই শিউরে উঠছি!”
আগেও কুমির উঠে এসেছিল বাড়ির উঠোনে
এই ঘটনা প্রথম নয়। কয়েক মাস আগেই কালনার জাপোট এলাকায় একটি কুমির একেবারে মানুষের বাড়ির উঠোনে উঠে এসেছিল। সেই ঘটনা ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছিল এলাকায়। বন দফতরের কর্মীরা এসে বহু চেষ্টার পর সেই কুমিরটিকে ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু তার পরেও এলাকা থেকে কুমিরের অস্তিত্ব যে মুছে যায়নি, বুধবারের ঘটনাই তার প্রমাণ।
কোথা থেকে আসছে এই কুমির?
প্রশ্ন উঠছে, এই কুমিরগুলি কোথা থেকে আসছে? স্থানীয়দের দাবি, কোনওভাবে উজান থেকে ভাগীরথী ধরে এগিয়ে আসছে কুমির। কেউ বলছেন, নদীর ধারে জলাশয় বা খাল থাকলেও সেগুলিতে নজরদারি হয় না, সেখান থেকেই নদীতে ঢুকছে কুমির। তবে প্রশাসনের তরফে এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
নৌকাচালকদের এখন দ্বিগুণ সতর্কতা
খেয়াঘাটে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ নদী পার হন। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় নৌচালকেরা। একজন চালক জানান,“জীবনে এই প্রথম কুমির এত কাছে দেখলাম। এখন তো জলেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে, নৌকা চালানোর চেয়েও বেশি সতর্ক থাকতে হচ্ছে।”
বন দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
একাধিকবার কুমির দেখা যাওয়ার পরেও কেন নদীপারে কোনো ধরনের নজরদারি নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রাও। অনেকেই বলছেন, প্রশাসন কেবল ঘটনাটি ঘটার পর আসে, তার আগে কোনও পদক্ষেপ নেয় না।স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন,“আমরা তো প্রতিদিন এই নদী পার হই। এখন কুমির দেখে আতঙ্কে পড়েছি। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া, নইলে কোনওদিন বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।”
প্রশাসনের কাছে দাবি: নিরাপত্তা ও নজরদারি
এই ঘটনার পর স্থানীয়রা স্পষ্ট ভাষায় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন—ভাগীরথী নদীর বিশেষ করে খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায় কুমিরের গতিবিধির উপর নজরদারি চালানো হোক, এবং প্রয়োজনে নিরাপত্তা বাড়ানো হোক। নয়তো ভরসা হারাচ্ছেন নিত্যযাত্রীরা।
একবার নয়, দু’বার নয়—বারবার কুমির দেখে আতঙ্কে কাঁপছে কালনার বাসিন্দারা। নদী যেন এখন আর শুধু যাতায়াতের পথ নয়, বরং এক অনিশ্চিত বিপদের নাম। এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের কাছে দ্রুত কোনও পদক্ষেপের আবেদন জানাচ্ছে গ্রামের বাসিন্দারা।