প্রাক-বর্ষার দুর্যোগ সামাল দিতে যখন সুন্দরবন উপকূলজুড়ে চলছে প্রশাসনের তৎপরতা, ঠিক সেই সময়েই সামনে এল চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির খবর। কাকদ্বীপ মহকুমার একাধিক ব্লকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য বরাদ্দ প্রায় ১২৪৫ মেট্রিক টন সরকারি চাল গায়েব হয়ে গিয়েছে হোলসেলারের গুদাম থেকে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা।
চাল গায়েব! শুরু দুর্নীতির তদন্ত
২০১৫ থেকে ২০২১ অর্থবর্ষের মধ্যে এই চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। অভিযোগ, ওই চাল রাখা ছিল কাকদ্বীপের হোলসেলার অমিত ভকতের গুদামে। কিন্তু সম্প্রতি তদন্তে দেখা যায়, গুদামে বরাদ্দ চালের কোনও হদিস নেই। বিষয়টি জানাজানি হতেই কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশের পক্ষ থেকেও সরকারি সম্পদের অপব্যবহার এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনে মামলা রুজু হয়েছে। অভিযোগ ওঠার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্ত হোলসেলার।
বিজেপির দাবি, সিবিআই তদন্ত হোক
এই দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে শাসক দলের দিকে আঙুল তুলেছে বিজেপি। মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার বিজেপি নেতা অরুণাভ দাস বলেন, “আমরা বহুদিন ধরেই দুর্যোগ মোকাবিলার চাল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে এসেছি। এবার প্রশাসন নিজেই হোলসেলারের বিরুদ্ধে FIR করে সেই অভিযোগে সিলমোহর দিল।” তিনি দাবি করেন, এই দুর্নীতির সঙ্গে শাসকদলের নেতা ও সরকারি আধিকারিকদের যোগসূত্র আছে, সিবিআই তদন্তেই প্রকৃত সত্য সামনে আসবে।
অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ ছিল
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত হোলসেলার অমিত ভকতের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে রেশনের চাল গরমিলের অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছিল। সেই ঘটনায় তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হয়। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত থাকলেও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিল জেলা খাদ্য দফতর। আগের থেকেই তাঁর গুদামে চাল মজুত নিয়ে সন্দেহ ছিল, এবার সেই সন্দেহই সত্যি হল।
শাসকদলের পাল্টা দাবি
তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শ্রীমন্ত মালি বলেন, “চালের গরমিলের প্রমাণ পেয়েই মহকুমা প্রশাসন FIR করেছে। প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে, এতে রাজনীতির কিছু নেই।” তিনি বিরোধীদের ‘অকারণ লাফালাফি’ বলেও কটাক্ষ করেন।
তালাবন্ধ গুদাম, নিখোঁজ হোলসেলার
খবরে প্রকাশ, কাকদ্বীপের বিদ্যানগরে অভিযুক্ত হোলসেলারের গুদাম তালাবন্ধ। বাড়িতেও খোঁজ মেলেনি তার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তদন্ত চলছে, সময় এলেই সব সামনে আসবে।