সিকিমে কয়েকদিন ধরে চলা টানা ভারী বৃষ্টির ফল স্বরূপ উত্তরের নদীগুলির জলস্তর ক্রমেই বাড়ছে। তারই জেরে হঠাৎ করে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে তিস্তা নদী। আর এই নদীর রোষেই জলপাইগুড়ির ক্রান্তি ব্লকের চ্যাংমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৭৮টি পরিবার একপ্রকার ঘরছাড়া হয়ে পড়েছে। শুক্রবার রাত থেকে নদীর জল এলাকা প্লাবিত করতে শুরু করে। সকালে উঠে বাসিন্দারা দেখেন, চারিদিকে জল থইথই করছে—ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়েছে বৃষ্টির জল। রান্নাঘর, শোবার ঘর, উঠোন—সবই এখন তিস্তার জলমগ্ন।
ঘর ছেড়ে বাঁধে, খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী জীবন
জীবনের তাগিদে গ্রামবাসীরা তখন যা পেয়েছেন তাই গুছিয়ে নিয়ে দৌড়েছেন গ্রামের পাশের উঁচু বাঁধে। সেখানেই এখন তৈরি হয়েছে অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরের মতো পরিবেশ। খোলা আকাশের নিচে ঘরছাড়া মানুষগুলোর চোখে-মুখে শুধু দুশ্চিন্তা আর অনিশ্চয়তা। নেই পর্যাপ্ত খাবার, নেই বিশুদ্ধ জল, ছোট ছোট শিশুরা ঠান্ডায় কাঁপছে। বৃদ্ধরা ভয় পাচ্ছেন আরও বৃষ্টিপাত হলে তিস্তার জল আর বাড়বে না তো? এই অবস্থায় রাত কেটেছে তাদের মাটির বিছানায়, ছাউনি হিসেবে শুধুই একটি প্লাস্টিক শিট।
এলাকা পরিদর্শনে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, দেওয়া হল আশ্বাস
এই চরম অবস্থার খবর পেয়ে শনিবার সকালে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন ক্রান্তি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পঞ্চানন রায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান এবং অন্যান্য প্রশাসনিক প্রতিনিধিরা। তারা এলাকা ঘুরে দেখেন, বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে হাত দেওয়ার নির্দেশ দেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে আপাতত শুকনো খাবার, পানীয় জল ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে আশ্বাস দেন পঞ্চায়েত সদস্যরা।
প্রতিবছর একই দৃশ্য, প্রশ্নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা
এই এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এটা নতুন নয়। প্রায় প্রতি বর্ষায় তিস্তার জল বেড়ে গ্রাম প্লাবিত হয়। কিন্তু এত বছর পরেও কোনও স্থায়ী সমাধানের দিশা মেলেনি। দুর্বল বাঁধ, অপরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা আর উপযুক্ত পূর্বপ্রস্তুতির অভাবে প্রতিবছর বন্যা নামেই এক দুঃস্বপ্ন হয়ে ফিরে আসে। এই বছরও তেমনই চিত্র। প্রশাসনের সাময়িক তৎপরতা দেখা গেলেও সাধারণ মানুষ চাইছেন স্থায়ী ব্যবস্থা—যাতে এই বারংবার ঘরছাড়া হওয়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মেলে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস: আশঙ্কা আরও বৃষ্টিপাতের
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিন উত্তরবঙ্গে আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে তিস্তার জলস্তর আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়—এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন কতটা দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয় এবং কতটা দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে চ্যাংমারির জলমগ্ন পরিবারগুলি।