Old Age Pension : রাজ্য সরকারের অন্যতম সফল সামাজিক প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর মাধ্যমে সুবিধা পাওয়া মহিলাদের জন্য এবার আরও এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এবার থেকে ৬০ বছর বয়স হলেই আলাদা করে আবেদন না করেও তাঁরা সরাসরি বার্ধক্য ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। এই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে উপভোক্তাদের হয়রানি যেমন কমছে, তেমনি প্রশাসনিক দিক থেকেও বাড়ছে কার্যকারিতা।
কীভাবে কাজ করছে এই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি?
২০২৩ সাল থেকে শুরু হয়েছে এই প্রক্রিয়া। যেসব মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের অধীনে রয়েছেন এবং বয়স ৬০ ছুঁয়েছেন, তাঁদের নাম নিজে থেকেই সরকারি তথ্যভাণ্ডার থেকে বার্ধক্য ভাতার তালিকায় তোলা হচ্ছে। অর্থাৎ, এবার পেনশনের জন্য আলাদা করে আবেদন করার প্রয়োজনই থাকছে না। সমাজকল্যাণ দপ্তর নিজেই সেই কাজ করছে।
এই বিষয়ে শুক্রবার বিধানসভায় মুখ খোলেন রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬ লক্ষ ৮২ হাজার ৮৯৫ জন উপভোক্তা এইভাবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬ লক্ষ ৩৪ হাজার ৮৩৭ জন বার্ধক্য ভাতার সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া ৪১ হাজার ৮৯২ জন তফশিলি বন্ধু এবং ৬,১৬৬ জন জয় জোহার প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন।
‘জয় বাংলা’ পোর্টালে যুক্ত হয়েছে তথ্য
এই উপভোক্তাদের সমস্ত তথ্য রাজ্য সরকারের ‘জয় বাংলা’ পোর্টালে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। ফলে যেকোনও প্রয়োজনে তথ্য যাচাই করা এখন আরও সহজ হচ্ছে। এই ডিজিটাল সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া আরও বেশি স্বচ্ছ ও গতিশীল হচ্ছে।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অধীনে থাকা মহিলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২০ লক্ষ। ২০২১ সালের অগস্টে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে এই প্রকল্পে নাম লেখাতে শুরু করেন মহিলারা। প্রথমদিকে সাধারণ শ্রেণির মহিলারা পেতেন ৫০০ টাকা, আর তফশিলি ও উপজাতি শ্রেণির মহিলারা পেতেন ১,০০০ টাকা। এখন এই ভাতা বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ১,০০০ ও ১,২০০ টাকা।
এই প্রকল্পে রাজ্যের খরচ এখন পর্যন্ত ৬৩ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা (২০২৫ সালের ১০ জুন পর্যন্ত)। আট দফায় অনুষ্ঠিত হয়েছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার শিবির, যেখানে অংশ নিয়ে লক্ষ লক্ষ মহিলা উপভোক্তা হিসেবে যুক্ত হয়েছেন।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের গুরুত্ব
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত সমাজকল্যাণের দৃষ্টিকোণ থেকে যথেষ্ট প্রশংসাযোগ্য। কারণ, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময়েই সরকারি প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে গিয়ে প্রবীণ নাগরিকদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া তাঁদের সেই ঝামেলা থেকে মুক্তি দিচ্ছে।
এই পদক্ষেপ শুধু প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসনিক উদ্ভাবনের উদাহরণ নয়, বরং এক মানবিক ও নারীকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রতিফলন। ভবিষ্যতে এইরকম স্বয়ংক্রিয় সংযুক্তিকরণ আরও অন্যান্য প্রকল্পেও ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের জীবন অনেকটাই সহজ হতে পারে।
নারীকল্যাণ ও সামাজিক নিরাপত্তার লক্ষ্যে এই ধরনের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে এক মাইলফলক। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে বার্ধক্য ভাতায় রূপান্তর এক নজিরবিহীন উদ্যোগ, যা শুধু সুবিধা নয়, বয়ে এনেছে সামাজিক স্বীকৃতিও। এই প্রকল্পের সাফল্য প্রমাণ করে, প্রশাসনিক সদিচ্ছা থাকলে প্রযুক্তি ও মানবিকতা একসঙ্গে চলতে পারে।