বৈধ ভিসা, আমন্ত্রণপত্র—সব থাকা সত্ত্বেও সন্দেহের বশে সানফ্রান্সিসকো বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠানো হল পার্বতী বাউলকে। পাঁচ বছরের জন্য জারি হল নিষেধাজ্ঞা।
কেন এমন অপমান?
২৫ বছর ধরে সারা বিশ্ব ঘুরে বাউলগান পরিবেশন করছেন পার্বতী বাউল। বাউলের দার্শনিক সুর আর একতারা হাতে তাঁর গান আজ আন্তর্জাতিক মহলেও সমাদৃত। চলতি মাসেই আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোতে জর্জ ব্রুকসের সঙ্গে যুগলবন্দিতে পারফর্ম করার কথা ছিল তাঁর। আমন্ত্রণপত্রও ছিল। কিন্তু ১৮ মে তাঁকে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠায় মার্কিন অভিবাসন দফতর।
পার্বতীর অভিযোগ, তাঁর কাছে বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র “সন্দেহের” বশেই তাঁকে আটকে দেওয়া হয়। মার্কিন এক অ্যাটর্নির সঙ্গেও তিনি যোগাযোগ করেন, যিনি সাফ জানান—কোনও কাগজপত্রে অসঙ্গতি নেই। তবু মার্কিন আধিকারিকদের সন্দেহ, তিনি হয়তো আমেরিকায় থেকেই যেতে পারেন জীবিকার খোঁজে! সেই কারণেই তাঁকে দেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
“বাক্স্বাধীনতার দেশেও এ ভাবে?”
পার্বতীর কথায়, “এটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ২৫ বছর ধরে আমি এক দেশ থেকে আরেক দেশে গান নিয়ে গিয়েছি, কখনও কোনও ভিসা বাতিল হয়নি, কখনও কোনও অভিযোগ ওঠেনি। শুধু কল্পনাপ্রসূত সন্দেহের ভিত্তিতে এমন ব্যবহার লজ্জাজনক।”
তিনি আরও বলেন, “আমার পাসপোর্ট খুললেই বোঝা যাবে, আমি কোথায় কোথায় গেছি। আমি আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে গেছি গান পরিবেশন করতে, কাজ করতে নয়। এই ঘটনা শুধু আমার নয়, সকল স্বাধীন শিল্পীর জন্যই এক বার্তা বয়ে আনে।”
পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
এই মুহূর্তে আমেরিকা যাওয়ার আর কোনও ভাবনাই নেই পার্বতীর। তাঁর মতে, বাতিল হওয়া অনুষ্ঠান আর্থিকভাবে নয়, বরং মনন ও মানবিক দিক থেকে অনেক বড় ক্ষতি। ভবিষ্যতে যদি যেতেই হয়, তাহলে আইনি পথে ফের আবেদন করতে হবে।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমেরিকার অভিবাসন নীতি আরও কঠোর হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এর আগেও দাবি করেছে, বাইডেনের শিথিল নীতির ফাঁক গলেই দেশজুড়ে বেড়েছে অপরাধ, মাদক ব্যবসা এবং অবৈধ বসবাস। হোয়াইট হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষমতা নেওয়ার পর প্রথম মাসেই প্রায় ৩৭ হাজার অবৈধ বাসিন্দাকে দেশছাড়া করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
একজন আন্তর্জাতিক শিল্পীর সঙ্গে এ ধরনের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। পরিচিত শিল্পী যদি এরকম হয়রানির শিকার হন, তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে শিল্প-সংস্কৃতি মহলে।