Illegal immigrants : অসমে অবৈধ অনুপ্রবেশ রুখতে এবার আরও কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে রাজ্য সরকার। সোমবার বিধানসভার একদিনের বিশেষ অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ঘোষণা করেন, এখন থেকে রাজ্যের জেলা প্রশাসকদের হাতে থাকবে অবৈধ বাংলাদেশিদের তাড়ানোর সরাসরি ক্ষমতা। ১৯৫০ সালের অভিবাসন আইন প্রয়োগ করে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে বলে জানান তিনি।
১৯৫০ সালের আইনেই এবার ‘অস্ত্র’
হিমন্ত বলেন, “আমরা ১৯৫০ সালের অভিবাসন আইন প্রয়োগ করছি, যাতে জেলা কমিশনারদের বিদেশি নাগরিকদের বেআইনি ঘোষণা করে দেশছাড়া করার অধিকার দেওয়া হয়েছে।” তিনি এও জানান, সুপ্রিম কোর্টের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ সম্প্রতি এই আইনের বৈধতা নিশ্চিত করেছে। ফলে, সরকার এখন এই আইনের বিধান অনুসারে ব্যবস্থা নিতে সম্পূর্ণ সক্ষম।
কংগ্রেসকে নিশানা, গগৈ পরিবারে ‘বিদেশি’ তকমা!
বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি কংগ্রেসকে নিশানা করেন। তাঁর অভিযোগ, “কংগ্রেস নাগরিকত্বের গুরুত্ব বোঝে না। কারণ, তাঁদের এক নেতার পরিবারের চারজনের মধ্যে তিনজনই বিদেশি।” যদিও নাম না করেই কথা বলেন তিনি, কিন্তু উপস্থিত দর্শক ও রাজনৈতিক মহল বুঝে নেয়, নিশানায় রয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ।
শর্মা অভিযোগ করেন, গগৈর স্ত্রী এখনও ব্রিটিশ নাগরিক, এবং তাঁদের দুই সন্তানও ভারতীয় নাগরিক নন। এই বক্তব্যের সময় কংগ্রেস বেঞ্চে উপস্থিত ছিলেন গগৈ নিজে।
তিন শতাধিক বাংলাদেশিকে ইতিমধ্যেই বহিষ্কার
মুখ্যমন্ত্রী জানান, “গত কয়েক মাসে আমরা ৩০০-রও বেশি অবৈধ বাংলাদেশিকে অসম থেকে বহিষ্কার করেছি।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের প্রশাসন এই বিষয়ে নিরলসভাবে কাজ করছে। আমরা অসমের জনগণ, ভাষা, সংস্কৃতি ও নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও আপস করব না।”
AIUDF-র সাবধানবার্তা, মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ
এই বিতর্কের মধ্যেই, AIUDF বিধায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, “নাগরিকত্ব কোনও মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান অধিকার। কাউকে বেআইনি বিদেশি ঘোষণা করার আগে অত্যন্ত সতর্কতা প্রয়োজন।”
উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা বলেন, “আপনারা বলছেন নাগরিকত্ব মূল্যবান, অথচ কংগ্রেসের কাছে এই বিষয়ের কোনও মূল্য নেই। ওদের এক নেতার পরিবারের তিনজনই বিদেশি, অথচ আজ তাঁরা আমায় প্রশ্ন করছেন!”
রাজনৈতিক তরজা আরও জোরদার
এই ঘোষণার পর অসমের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। কংগ্রেসের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি, তবে গোপনে অসন্তোষ রয়েছে বলে সূত্রের খবর। AIUDF-সহ বিরোধীরা বিষয়টিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার দাবি তুলছে।
চাপে প্রশাসন, নজরে বাস্তবায়ন
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আইনি ক্ষমতা জেলাশাসকদের হাতে তুলে দেওয়া হলেও, বাস্তবে এর প্রয়োগে সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, কোনও ভারতীয় নাগরিক ভুলবশত অবৈধ ঘোষিত হলে তার সামাজিক ও মানবিক মূল্য ভয়ানক হতে পারে।
উল্লেখ্য, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ঘোষণায় স্পষ্ট, অনুপ্রবেশ ইস্যুতে তাঁর সরকার আপসহীন মনোভাব নিয়েছে। রাজনৈতিক আক্রমণ থেকে প্রশাসনিক বাস্তবায়ন—সব দিকেই তৈরি হচ্ছে চাপ ও উত্তেজনার আবহ। এখন দেখার, বাস্তবে এই সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর এবং ন্যায্যভাবে বাস্তবায়িত হয়।