AWACS : পাকিস্তানের আকাশে বাড়তে থাকা হুমকি প্রতিহত করতে ভারতের বায়ুসেনা (IAF) এবার আরও ৬টি উন্নত AWACS (Airborne Early Warning and Control System) কেনার পথে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ইতিমধ্যেই ব্রাজিলের তৈরি এমব্রায়ার প্ল্যাটফর্মের ওপর ভিত্তি করে এই বিমানগুলি কেনার প্রস্তাব অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। প্রতিটি বিমানে বসানো হবে ভারতীয় সংস্থা DRDO-র তৈরি ‘নেত্রা মার্ক ১এ’ AESA রাডার।
আকাশে ভেসে থাকা নজরদারির চোখ
AWACS হল এমন বিমান যেগুলি আকাশপথে থেকে ৩৫০ কিমি পর্যন্ত শত্রুপক্ষের গতিবিধির উপর নজর রাখতে সক্ষম। সেনার ভাষায় একে বলা হয় “আকাশে ভেসে থাকা যুদ্ধনেতা”। যুদ্ধের সময় এগুলি শত্রু যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র বা আর্টিলারি আগুন শনাক্ত করতে ও নিজের বাহিনীকে সতর্ক করতে ব্যবহৃত হয়।
পাকিস্তানের হাতে SAAB-২০০০, চিনের তৈরি রাডারযুক্ত প্ল্যাটফর্ম: প্রস্তুত ভারতও
পাকিস্তান বর্তমানে আটটি SAAB-২০০০ ‘এরিয়ে’ AWACS ব্যবহার করছে। সেই সঙ্গে তাদের কাছে আছে চারটি চিনা ZDK-03 বিমান এবং তিনটি Dassault Falcon DA-20 ইলেকট্রনিক যুদ্ধ প্ল্যাটফর্ম। বিপরীতে, ভারতের হাতে এখন মাত্র ৩টি AWACS রয়েছে, যার মধ্যে দুটি ইজরায়েলি ফ্যালকন এবং একটি DRDO-র তৈরি নেত্রা।
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় ভারতীয় এস-৪০০ সিস্টেম ৩১৪ কিমি দূর থেকে একটি পাক SAAB-২০০০ ধ্বংস করেছিল — সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই আরও উন্নত AWACS চায় ভারত।
নজরে আরও মিড-এয়ার রিফুয়েলারও
শুধু AWACS নয়, পাশাপাশি আরও ৬টি মিড-এয়ার রিফুয়েলার কেনার ওপরও জোর দিচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। আমেরিকান মেট্রিয়া সামরিক ঠিকাদারের KC-135 রিফুয়েলার ইতিমধ্যেই ওয়েট লিজে নেওয়া হয়েছে। ভারতে বর্তমানে রাশিয়ান ৬টি রিফুয়েলার থাকলেও, নতুন প্রযুক্তি যুক্ত রিফুয়েলার আসা মানেই আরও দীর্ঘ পাল্লার অভিযানের সুবিধা।
চিন-তুরস্কের সাহায্যে পাকিস্তান: ভারতের কূটনৈতিক উদ্বেগ
চিন পাকিস্তানকে ইয়ুয়ান-ক্লাস সাবমেরিন, ফ্রিগেট ও অস্ত্রযুক্ত ড্রোন সরবরাহ করছে। তুরস্ক পাকিস্তানের জন্য করভেট জাহাজ নির্মাণ এবং আগুস্তা-৯০বি সাবমেরিন আপগ্রেড করছে। সেই সঙ্গে সরবরাহ করছে F-16 বিমানের খুচরো যন্ত্রাংশ।
ভারতের সেনাবাহিনী সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে উদ্ধার করা চিনা PL-15 মিসাইল, ফতেহ রকেট ও তুর্কি ড্রোন বিশ্লেষণ করছে — যা ভবিষ্যতের যুদ্ধের প্রস্তুতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কেন এই পদক্ষেপ জরুরি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিশেষত চিন-পাকিস্তান জোটের প্রেক্ষাপটে ভারতীয় আকাশসীমার নজরদারি ও প্রতিরক্ষার ক্ষমতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। AWACS এর মতো সিস্টেম শুধু যুদ্ধের সময় নয়, শান্তির সময়েও সীমান্তে আগাম সতর্কতা ও গোয়েন্দা নজরদারিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
IAF-এর এই সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করে দিচ্ছে, ভারত আর কেবল প্রতিক্রিয়াশীল নয় — এখন প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে আগেভাগেই। শত্রুর আকাশে নজর রেখে, শক্তিশালী গোয়েন্দা ব্যবস্থা গড়ে তুলে ভারত নিজের প্রতিরক্ষাকে পৌঁছে দিচ্ছে এক নতুন উচ্চতায়।