রাজ্যে সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে ফের একবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “২৬ শতাংশ SC এবং ৬ শতাংশ ST সংরক্ষণ রয়েছে রাজ্যে, এঁদের সবাই হিন্দুদের মধ্যে পড়েন।” তাঁর এই বক্তব্যে কার্যত শোরগোল পড়ে যায় রাজনৈতিক মহলে।
বিজেপিকে নিশানা, কিন্তু নাম নিলেন না
সংখ্যালঘুদের বঞ্চনার অভিযোগ উড়িয়ে পালটা তোপ
মুখ্যমন্ত্রী যদিও সরাসরি বিজেপির নাম নেননি, তবুও তাঁর বক্তব্য যে বিজেপির সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলিরই জবাব, তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, “রাজ্যে ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে আর্থিক ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে। ওদের খেতে দেব না, পড়তে দেব না—এই ধরনের নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। এটা মানবিকতা বিরোধী।” এই প্রসঙ্গেই তিনি টেনে আনেন মণ্ডল কমিশনের কথা, জানান OBC সংরক্ষণ করা হয়েছে সম্পূর্ণভাবে “social and economic backwardness”-এর ভিত্তিতে।
‘সংরক্ষণ ধর্ম দেখে হয় না’
সাফ বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর—‘সবার জন্য উন্নয়ন, ধর্ম নয় বিষয় সামাজিক দুর্বলতা’
মমতা স্পষ্ট করে দেন, সংরক্ষণ কোনও ধর্মের ভিত্তিতে নয়, বরং সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের উন্নয়নের কথা ভেবে করা হয়।
তিনি বলেন, “আমরা সংরক্ষণ দিই যাঁরা প্রকৃত অর্থে বঞ্চিত, পিছিয়ে পড়া। সেটা হিন্দু হোক বা মুসলিম—সেটা বড় কথা নয়।” তিনি আরও বলেন, যাঁরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকেও উন্নয়নের সুযোগ পান না, তাঁদের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিভাজনের অভিযোগ
সংরক্ষণ ইস্যুকে ঘিরে ভোট রাজনীতির অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর
বক্তব্যের শেষ দিকে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও একবার বিঁধেছেন বিজেপিকে। তিনি বলেন, “মানুষের ধর্ম, জাত, ভাষা বা খাওয়াদাওয়া দেখে নয়—কাজ দেখে বিচার হোক। বিজেপি বারবার চেষ্টা করছে বিভাজন তৈরির। আমরা তাতে নেই।” তাঁর দাবি, “বিজেপি হঠাৎ সংখ্যালঘুদের OBC তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয় তুলে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে। কিন্তু বাস্তব তথ্য বলছে, OBC তালিকায় হিন্দু ও মুসলিম দুই-ই রয়েছে, এবং তা মণ্ডল কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী বৈধ।”
নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু বার্তা?
বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সোজা কথা—এই ভাষা সংখ্যালঘু ভোটারদের দিকেই ইঙ্গিত করছে?
রাজ্যে পঞ্চায়েত ও পুরসভার নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে অনেকেই রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেই দেখছেন। বিশেষ করে যেখানে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সেখানে মমতার এই ‘স্পষ্টীকরণ’ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূল কংগ্রেসের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, “যাঁরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হয়ে কাজ করেন, তাঁরা যেন বিভ্রান্ত না হন। মমতার এই বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট।”
এই মন্তব্য রাজনৈতিক ভাবে ঠিক কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তা যে ভোটপূর্ব হাওয়া ঘনিয়ে তোলার ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় নেই রাজনৈতিক মহলে।