TRENDS
হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে গেল ল্যাপটপ? কী করবেন এখনই জেনে নিন
সাধ্যের মধ্যে সাশ্রয়ী বাইক খুজছেন! রইল ১ লাখের কমে সেরা কিছু সন্ধান

Sukanta Majumdar : শেষমেশ ক্ষমা চাইলেন সুকান্ত! পাগড়ির ‘অপমান’ ঘিরে বিতর্কের আবহে কালীঘাট ঘটনার ব্যাখ্যা

কালীঘাটে বিক্ষোভ চলাকালীন এক শিখ অফিসারের পাগড়িতে হাওয়াই চটির কাটআউট ছোড়া নিয়ে চরম বিতর্কে জড়ান বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার। অবশেষে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষমা চাইলেন তিনি।

Debapriya Nandi Sarkar

Sukanta Majumdar : একটা ছোট্ট ঘটনার আঁচ যে কত বড় রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নিতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে রইল কালীঘাট কাণ্ড। শিখ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আবেগে আঘাত লাগার অভিযোগে একপ্রকার কোণঠাসা হয়েই শেষমেশ ক্ষমা চাইলেন বিজেপি-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ১২ জুন, কলকাতার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনের সামনে বিজেপি-র একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির মাঝে ঘটে যায় সেই ‘অপ্রীতিকর ঘটনা’—যার অভিঘাত পৌঁছে গিয়েছে দিল্লি পর্যন্ত।

Advertisements
Whatsapp-color Created with Sketch. গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে এখনই যুক্ত হোন 👉🏻
Join Now

কী ঘটেছিল সেদিন?

ঘটনাটি ঘটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনের রাস্তা অবরোধ করে বিজেপির বিক্ষোভ চলাকালীন। সুকান্ত মজুমদার নিজেই জানিয়েছেন, ওই সময় কলকাতা পুলিশ তাঁকে এবং দলের অন্যান্য নেতা-কর্মীদের জোরপূর্বক প্রিজন ভ্যানে তুলে দেয়। সেই উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তে পুলিশের উদ্দেশ্যে ছোঁড়া একটি প্ল্যাকার্ড, যেটি হাওয়াই চটির আকৃতিতে তৈরি ছিল, দুর্ঘটনাবশত পড়ে যায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক শিখ ধর্মাবলম্বী সিআইএসএফ অফিসারের পবিত্র পাগড়ির উপর। এই ঘটনার ভিডিও সামনে আসতেই তৈরি হয় তীব্র বিতর্ক। বহু শিখ সংগঠন ও সাধারণ মানুষ সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দেন। রাজ্য রাজনীতিতেও এই ঘটনার আঁচ লাগে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় সুকান্তের খোলা চিঠি

ঘটনার চারদিন পর, মঙ্গলবার এক ফেসবুক পোস্টে ক্ষমা চান সুকান্ত মজুমদার। পোস্টে তিনি লেখেন,
“এই অনিচ্ছাকৃত ঘটনায় যদি কোনও শিখ ভাই বা বোনের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগে থাকে, তবে আমি বিনম্রভাবে তাঁদের কাছে আন্তরিক ক্ষমা প্রার্থনা করছি।” তিনি আরও জানান, বিজেপি এবং তার সমস্ত কর্মীরা শিখ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিশ্বাস, পবিত্র পাগড়ির মর্যাদা এবং তাঁদের গৌরবময় ঐতিহ্যের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল—ঘটনাটি পরিকল্পিত বা ইচ্ছাকৃত ছিল না।

Whatsapp-color Created with Sketch. সেরা খবরগুলো মোবাইলে পেতে এখনই যুক্ত হোন👉🏻
Join Now

মমতার তীব্র কটাক্ষ

ঘটনার পরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলেন, “এক শিখ অফিসারের পাগড়িতে চটি ছুড়েছে বিজেপি নেতা! ধর্মের অপমান করছে এরা। আজ হিন্দু, কাল শিখ, পরশু মুসলিম—এইভাবেই মানুষের বিভাজন করে বিজেপি রাজনীতি করে।” তিনি আরও দাবি করেন, এই ধরনের আচরণ শুধু অসংবেদনশীল নয়, বরং একেবারে নিন্দনীয় এবং সাংবিধানিক মর্যাদার পরিপন্থী।

রাজনৈতিক জল্পনা ও প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনার পর থেকেই শাসক দল তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে আক্রমণ শানাতে শুরু করে। যদিও বিজেপির তরফে প্রথম থেকেই দাবি করা হয়, বিষয়টি সম্পূর্ণ দুর্ঘটনাবশত ঘটেছে এবং এতে কোনওরকম অবমাননার উদ্দেশ্য ছিল না। এখন যখন সুকান্ত নিজেই সরাসরি ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন, তখন প্রশ্ন উঠছে—রাজনৈতিকভাবে এই পদক্ষেপের প্রভাব কী হতে পারে? অনেকে মনে করছেন, ভোটের আগে এমন ঘটনায় সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব পড়তে পারে।

শিখ সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর বিভিন্ন শিখ সংগঠন প্রতিবাদ জানালেও, সুকান্তের ক্ষমা চাওয়ার পরে অনেকেই বিষয়টিকে ‘সমাপ্ত’ বলে মনে করছেন। তবে সামাজিক মাধ্যমে এখনও প্রতিক্রিয়া থামেনি। অনেকে বলছেন, “ক্ষমা চাওয়া ভালো, কিন্তু ভবিষ্যতে যেন এমন অবমাননাকর দৃশ্য আর দেখতে না হয়।”

রাজনীতির উত্তাপে অনেক সময়েই ঘটনাগুলো কন্ট্রোলে থাকে না। তবে তা সামাল দেওয়ার কৌশল, ভাষা ও ব্যবহার দিয়েই বোঝা যায় কোনও নেতা কতটা দায়িত্বশীল। সুকান্ত মজুমদারের ক্ষমা প্রার্থনা হয়তো অনেক আঘাতকে প্রশমিত করতে পারবে, কিন্তু এই ঘটনা যে ভবিষ্যতের রাজনীতিতে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে—তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।