IranIsrael Conflict : মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের নাম করে চলছে এক ভয়ঙ্কর রক্তস্নান। ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষ যত বাড়ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে এই যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ—নারী, শিশু এবং বৃদ্ধেরা। এই মুহূর্তে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক পরিসংখ্যান সামনে আনল ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অবস্থিত ইরানি দূতাবাস।
‘নৃশংস হামলা’, বলছে ইরানি দূতাবাস
দূতাবাসের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “এখনও পর্যন্ত ২২৪ জন নিরীহ ইরানি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন এই সংঘর্ষে। তাঁদের মধ্যে রয়েছে বহু নারী এবং শিশু। আহত হয়েছেন আরও ১,২৫৭ জন। হাসপাতালগুলিতে ঠাঁই নেই, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে।” ইরানি দূতাবাস এই ঘটনাকে ‘নৃশংস এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং আন্তর্জাতিক মহলের কাছে সাহায্য ও হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছে।
কীভাবে শুরু হয়েছিল এই সংঘর্ষ?
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইজরায়েলের সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা তুঙ্গে উঠছিল। বিশেষ করে সিরিয়া ও লেবাননে ইরানপন্থী গোষ্ঠীগুলিকে লক্ষ্য করে ইজরায়েলের সামরিক অভিযানের পর থেকেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছিল। এরপর ইরানের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ও বিমান হামলার অভিযোগ তোলে তেহরান। ইজরায়েল সরাসরি দায় না নিলেও গোটা বিশ্বের ধারণা, এই হামলার নেপথ্যে ছিল তাদের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। ফলস্বরূপ, ইরান শুরু করে পাল্টা আক্রমণ।
বেসামরিক এলাকাই নিশানায়!
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, এই যুদ্ধ মূলত সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। হাসপাতাল, স্কুল, আবাসিক এলাকা—কোনও কিছুই নিরাপদ নয়। ইরানের একাধিক শহরে বোমা হামলার ফলে ধসে পড়েছে বহু বাড়িঘর। অনেকে পরিবার এক নিমিষে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। দূতাবাসের এক আধিকারিক বলেন, “এটা কোনও সামরিক লড়াই নয়। এটা একতরফা হত্যালীলা। যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের বেশিরভাগই যুদ্ধের সঙ্গে যুক্তই ছিলেন না।”
আন্তর্জাতিক স্তরে উদ্বেগ, তবু নীরবতা
ইরানের তরফে রাষ্ট্রপুঞ্জ, ওআইসি, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে সরব হওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি। কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চললেও মাটিতে রক্তপাত বন্ধ হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের যুদ্ধ যেখানে একাধিক শক্তিধর দেশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, সেখানে মানবিকতার আবেদন বহু সময়েই রাজনৈতিক চাপে চাপা পড়ে যায়।
ভারতের অবস্থান কী?
যদিও ভারত সরকার এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও কড়া প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে দিল্লিতে ইরানি দূতাবাসের বিবৃতি প্রকাশের অর্থ স্পষ্ট—তারা চায় ভারত এই পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে। ভারত ঐতিহাসিকভাবে ইরানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখলেও, ইজরায়েলও ভারতের ঘনিষ্ঠ সামরিক মিত্র। এই দ্বৈত সম্পর্কের কারণে ভারতের অবস্থান অত্যন্ত সংবেদনশীল।
আগুনে ঝলসাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য, শান্তির পথ কোথায়?
যুদ্ধ থামার কোনও ইঙ্গিত নেই। বরং ইরান ও ইজরায়েল উভয়পক্ষেই এখন যুদ্ধের প্রস্তুতি আরও জোরদার করছে। নতুন করে ড্রোন হামলা, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং সীমান্তে সেনা মোতায়েন, সবই চলেছে একসাথে। প্রশ্ন উঠছে—এই সংঘর্ষে শেষ পর্যন্ত কে জিতবে? কিংবা আদৌ কেউ জিতবে কি? যুদ্ধের রাজনীতিতে হয়তো কেউ হাসবে, কিন্তু হারবে শুধুই সাধারণ মানুষ। আজকের এই রিপোর্ট সেই নির্মম সত্যিটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। মানবতার নামে যুদ্ধের নামে চলা এই হত্যালীলা থামানো এখন সময়ের দাবি। না হলে আগামী দিনে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, সারা বিশ্বের ভবিষ্যতও পড়বে গভীর অন্ধকারে।
224 civilian citizens including women and children have been martyred and 1257 others injured so far in brutal, says Embassy of the Islamic Republic of Iran in New Delhi on Iran-Israel conflict. pic.twitter.com/brRmigtuiI
— ANI (@ANI) June 17, 2025