Cyber Fraud : জল থেকে মাছ তোলার মতো সহজেই যখন আয় হবে, তখন কে না চায় এমন সুযোগ নিতে! সুশোভন মণ্ডলও চেয়েছিলেন একটু বাড়তি রোজগার। অনলাইন বিজ্ঞাপন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক লোভনীয় বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। বলা হয়, নির্দিষ্ট অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিনই আসবে লভ্যাংশ। আর এই স্বপ্নের ফাঁদেই আটকে পড়েন গোবরডাঙার এই বাসিন্দা।
১২ লক্ষ টাকার বেশি খুইয়ে বোঝেন প্রতারণা
একটু একটু করে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন সুশোভন। শুরুতে লভ্যাংশের কিছুটা অংশ অ্যাকাউন্টে ফেরত আসায় বিশ্বাস জন্মায় তাঁর। এরপর আরও টাকা ঢালেন, আশা আরও বেশি লাভের। কিন্তু সময় গড়াতেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় প্রতারকদের সঙ্গে। অ্যাপ বন্ধ, ফোন বন্ধ, হোয়াটসঅ্যাপেও ব্লক করে দেওয়া হয় তাঁকে। তখনই হুঁশ ফেরে সুশোভনের। বুঝতে পারেন, প্রতারিত হয়েছেন।
সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের, তদন্তে নামল পুলিশ
এরপরই বারাসাতের সাইবার থানার দ্বারস্থ হন তিনি। বিস্তারিত অভিযোগ জানানোর পর তদন্ত শুরু করে পুলিশ। একাধিক লেনদেনের হদিস পাওয়া যায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও ইউপিআই পেমেন্টের মাধ্যমে। শুরু হয় প্রতারকদের টাকা পাঠানোর অ্যাকাউন্টগুলির নজরদারি।
তীব্র তদন্তে উদ্ধার সাড়ে চার লক্ষ টাকা
সুশোভনের মোট বিনিয়োগ ছিল প্রায় ১২ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা। তবে প্রাথমিক তদন্তে যে পরিমাণ অর্থ ট্র্যাক করা সম্ভব হয়েছে, তা হল ৪,৫১,৩৬০ টাকা। সেই অর্থ অবিলম্বে ফ্রিজ করে আদালতের নির্দেশে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয় সুশোভন মণ্ডলকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাকি টাকার হদিস পেতে তদন্ত জারি রয়েছে। একাধিক অ্যাকাউন্ট সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। পুলিশ ইঙ্গিত দিয়েছে, এই চক্রের পিছনে একটি বৃহত্তর গ্যাং কাজ করছে, যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনলাইন প্রতারণার মাধ্যমে টাকা তুলে নিচ্ছে।
সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আবেদন পুলিশের
পুলিশের তরফে বারবার বলা হচ্ছে, এই ধরনের লোভনীয় অফারে পা না দিতে। কোনও সংস্থা বা অ্যাপ যদি অস্বাভাবিক হারে লাভ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে অবশ্যই তার সত্যতা যাচাই করতে হবে। সন্দেহজনক কিছু মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে সাইবার থানায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন আধিকারিকরা।
এই ঘটনায় শিক্ষা কী?
সুশোভন মণ্ডলের মতো বহু মানুষ প্রতিদিন অনলাইন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশে অভিযোগই জানানো হয় না লজ্জা বা ভয় থেকে। অথচ সময়মতো অভিযোগ জানালে অনেকটাই অর্থ ফেরানো সম্ভব। বারাসত সাইবার পুলিশের এই পদক্ষেপ শুধু টাকা উদ্ধার নয়, ভবিষ্যতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বটে।
উল্লেখ্য, আজকের দিনে ডিজিটাল লেনদেন যেমন আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, তেমনই প্রতারণার সুযোগও বাড়িয়ে দিয়েছে। একটু সচেতনতা, একটু সতর্কতা—এই দুটো অস্ত্রই আমাদের সুরক্ষার প্রধান হাতিয়ার। সুশোভনের মতো কেউ যদি ভুল করে ফেলেন, তাহলে লজ্জা নয়, বরং সাহস নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়াই হবে সঠিক পদক্ষেপ।