পশ্চিমবঙ্গের ওবিসি (অনগ্রসর শ্রেণি) তালিকা ঘিরে বিতর্ক যেন শেষ হচ্ছে না। পুরনো তালিকা বাতিল হওয়ার পর রাজ্য সরকার নতুন একটি তালিকা প্রকাশ করলেও, তাতেও হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা এসে পড়ল। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সেই তালিকা সহ সব সরকারি বিজ্ঞপ্তির উপরে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে, যা বলবৎ থাকবে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত।
কী বলল হাইকোর্ট?
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলাটি ওঠে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্য সরকার ওবিসি তালিকা তৈরি করতে গিয়ে সমস্ত প্রক্রিয়া ও সমীক্ষা যথাযথভাবে মানেনি বলে অভিযোগ ওঠে। মামলাকারীর আইনজীবীদের বক্তব্য, হাইকোর্টের পূর্ববর্তী রায়কে অগ্রাহ্য করে সমীক্ষা ছাড়াই তালিকা প্রকাশ করেছে রাজ্য।
অন্যদিকে, রাজ্য ও অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ কমিশনের আইনজীবীদের দাবি ছিল, নির্ধারিত নিয়ম মেনেই সমীক্ষা চালিয়ে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। কিন্তু আদালত জানতে চায়, সেই সমীক্ষা সংক্রান্ত নথিপত্র কোথায়? এরপরই আদালত জানায়, সমস্ত বিজ্ঞপ্তির উপরে আপাতত স্থগিতাদেশ জারি করা হল এবং পরবর্তী শুনানি হবে ২৪ জুলাই।
রাজ্য পোর্টাল চালুর সিদ্ধান্তেও স্থগিতাদেশ
শুধু তালিকা নয়, রাজ্য সরকার সম্প্রতি যে পোর্টাল চালু করে সমস্ত দপ্তরে ওবিসি শংসাপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল, সেখানেও হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করেছে। আদালত স্পষ্ট জানায়, পোর্টাল ব্যবহার করে নতুন করে সার্টিফিকেট গ্রহণও আপাতত স্থগিত থাকবে।
মমতার ব্যাখ্যা ও রাজনীতির আঁচ
এই মামলার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় বলেন, আদালতের নির্দেশ মেনেই নতুন তালিকা তৈরি করা হয়েছে। অনগ্রসর সম্প্রদায় উন্নয়ন কমিশনের তরফে ১৪০টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আদালতের পর্যবেক্ষণ স্পষ্ট করে দেয় যে, এই তালিকাকরণ পদ্ধতির স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
মামলাকারীরা জানান, তালিকা প্রকাশ হলেও সেটি নিয়ে কোনও সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি, বা জনসাধারণকে তা জানানো হয়নি। আদালত তাই বিচারিক স্বচ্ছতার স্বার্থে পুরো প্রক্রিয়াকে আপাতত আটকে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
১২ লক্ষ শংসাপত্র বাতিলের রেশ কাটেনি
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ২২ মে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, ২০১০ সালের পর দেওয়া সমস্ত ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করতে হবে। আদালতের মতে, ১৯৯৩ সালের ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস আইনের পরিপন্থীভাবে সেই শংসাপত্রগুলি দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল হয়ে যায়। নতুন করে তালিকা প্রকাশ করে সেই শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু হাইকোর্টের এই স্থগিতাদেশে সেই পরিকল্পনায় আবারও বড় ধাক্কা খেল রাজ্য প্রশাসন।
পরবর্তী শুনানির দিকে তাকিয়ে রাজ্য
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের পক্ষ থেকে পরবর্তী শুনানিতে আরও বিশদ নথি ও তথ্য আদালতে পেশ করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আগামী ২৪ জুলাই ফের এই মামলার শুনানি হবে। ততদিন পর্যন্ত ওবিসি তালিকা সংক্রান্ত সমস্ত কার্যকলাপ স্থগিতই থাকছে।
এই মামলার প্রভাব শুধু প্রশাসনিক স্তরেই সীমাবদ্ধ নয়, এর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও হবে ব্যাপক। বিশেষ করে পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনের আগে অনগ্রসর শ্রেণির ভোটব্যাঙ্ককে কেন্দ্র করে রাজনীতির পারদ চড়বে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।