সাউথ ইন্ডিয়ান সিনেমার আইকন রজনীকান্ত, যে স্ক্রিনে এসে দাঁড়ালে সিনেমা হিট। রজনীকান্তের স্টাইলে আজও ফিদা লাখ লাখ দর্শক। কিন্তু এই অভিনেতার জীবনের একটা দিক অধিকাংশেরই অজানা। তার জীবনের গল্প সিনেমার গল্পের থেকে কোন অংশে আলাদা নয়। তার ব্যক্তিগত জীবন ও প্রেমের সম্পর্কে টানা পড়েন মানুষের চোখে জল এনে দেবে। আজকের এই প্রতিবেদনে সেই গল্প শোনাবো আপনাদের।
বাস কন্ডাক্টর রজনীকান্তের গল্প জানেন?
আজকের রজনীকান্ত লাখ লাখ মানুষের আইকন হলেও, রজনীকান্তের জীবনের গল্পের শুরুটা এতটা রাজকীয় ছিল না। প্রথম জীবনে বাস কন্ডাক্টর ছিলেন রজনীকান্ত, বেঙ্গালুরুতে বাস কন্ডাক্টর থাকাকালীন একটি মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু সময়ের সাথে সেই সম্পর্ক মিলিয়ে যায়। এরপরে কি বিয়ের প্রস্তাব এলেও সেই মেয়ে রজনীকান্তি দেখে বলেছিলেন, ‘একে তো দেখতে গুন্ডার মতন, গায়ের রং কালো’। সেই দিনের সেই অপমান গভীর ক্ষত তৈরি করেছিল রজনীকান্তের মনে। কিন্তু এরপর রজনীকান্ত ঠিক করেন তিনি যদি কখনো বিয়ে করেন তাহলে তিনি গৌরবর্ণা সুন্দরী এক নারীকেই বিয়ে করবেন।
এক রহস্যময় গুঞ্জন- সিল্ক স্মিতা ও রজনীকান্ত
এরপর সময়ও ভাগ্যের ফেরে সিনেমা জগতে প্রবেশ করেন রজনীকান্ত। ‘থাঙ্গামাগান’, ‘পায়ুম পুলি’, ‘শিভাপ্পু সূরিয়ান’—এই সব সিনেমায় কাজ করেন রজনীকান্ত। এই সিনেমায় রজনীকান্তের সাথে নায়িকার চরিত্রে কাজ করেছিলেন সিল্ক স্মিতা। এই জুটির অনস্ক্রিন রসায়ন দেখে অনেক গুজব তৈরি হয়েছিল। অনেকে বলছিলেন স্ক্রিনের বাইরে এদের সম্পর্ক অনেক গভীর, কিন্তু এই গুজবে কান দেয়নি কেউই।
এরপর, ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ নিয়ে বিতর্ক চরমে ওঠে। অনেকেই দাবি করেন, নাসিরুদ্দিন শাহ যে চরিত্রে সিল্ককে লালসার চোখে দেখেন, তা নাকি রজনীকান্তের বাস্তব জীবনের ছায়া। পরে অবশ্য নির্মাতারা জানিয়ে দেন, এ চরিত্র একেবারেই কাল্পনিক।
লতা রঙ্গাচারী— এখান থেকেই শুরু হল রজনীকান্তের প্রেম জীবন
১৯৮১ সালে রজনীকান্ত বিয়ে করেন চেন্নাইয়ের এথিরাজ কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী লতা রঙ্গাচারীকে। রজনী তখন সুপারস্টার, আর লতা কলেজ ম্যাগাজিনের জন্য তাঁকে ইন্টারভিউ নিতে গিয়েছিলেন। সেখানেই প্রথম দেখা। তবে প্রপোজ নয়, রজনী সোজাসুজি জানিয়ে দেন—“আমি তোমাকে বিয়ে করব।” লতা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, “ও প্রস্তাব দেয়নি, জানিয়ে দিল যে আমাকে বিয়ে করবে। এরপর আর কোনও প্রশ্ন ছিল না।”
‘ব্র্যান্ড রজনী’— কে আছে এর পেছনে?
রজনীকান্তের ব্যবসা, ব্র্যান্ডিং, পিআর—সবকিছুর পেছনে রয়েছেন লতা। ‘ব্র্যান্ড রজনী’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা, মার্চেন্ডাইজিং শুরু করা, এমনকি বিভিন্ন পণ্যে রজনীর নাম ব্যবহারের অনুমতি সব লতার হাত ধরে শুরু হয়। লতা নিজে একটি স্কুল চালান, এর পাশাপাশি তিনি সমাজসেবাও করেন। আর এইসবের আড়ালে থেকেই তৈরি করেছেন ‘রাজা’কে ‘থালাইভা’।
গুজব, অপমান, প্রেম আর পরিবার—রজনীকান্তের জীবনের কাহিনি যেন সিনেমার চেয়েও বেশি রঙিন। কিন্তু এই চেনা অচেনা নারীরাই তাঁকে গড়েছেন, ভেঙেছেন, আবার নতুন করে গড়ে তুলেছেন। আজ তিনি শুধু একজন তারকা নন, এক কিংবদন্তি। আর সেই কিংবদন্তির নেপথ্যে যে গল্পগুলো আছে, সেগুলোও কম চমকপ্রদ নয়।