TRENDS
হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে গেল ল্যাপটপ? কী করবেন এখনই জেনে নিন
সাধ্যের মধ্যে সাশ্রয়ী বাইক খুজছেন! রইল ১ লাখের কমে সেরা কিছু সন্ধান

Khardah : মৃত্যুর পরও স্বজনহীন সায়ন্তী! ক্যান্সারে মৃত্যুর পরে বাড়ির দরজাই খুলল না পরিবারের

খড়দহে ক্যান্সারে মৃত তরুণী সায়ন্তীর মরদেহ নিতে অস্বীকার পরিবারের সদস্যদের। ছ’ঘণ্টা ধরে বাড়ির বাইরে পড়ে ছিল দেহ, শেষে বন্ধুরা ও পুলিশের সহযোগিতায় শ্মশানে সৎকার। অমানবিক এই ঘটনা রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয়দের।

Debapriya Nandi Sarkar

Khardah : একদিকে মরণব্যাধি ক্যান্সার, অন্যদিকে পরিবারের অস্বীকার—এই দুইয়ের চাপে মৃত্যু পর্যন্ত নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন খড়দহের সায়ন্তী দাস। মৃত্যুর পরও ‘আপনজনেরা’ তাঁর পাশে দাঁড়াল না। বন্ধুরাই শেষ পর্যন্ত মরদেহ কাঁধে তুলে দিলেন, পুলিশের সহযোগিতায় সম্পন্ন করলেন শেষকৃত্য।

Advertisements
Whatsapp-color Created with Sketch. গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে এখনই যুক্ত হোন 👉🏻
Join Now

রহড়ায় ছায়া অমানবিকতার

বুধবার রাতে রহড়া পূর্বাচলে খড়দহ পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ঘটেছে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা। সায়ন্তী দাস, বয়স মাত্র ৩৪। পেশায় লাইব্রেরিয়ান, একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে চাকরি করতেন। কয়েক মাস ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় নিজেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন বন্ধুর বাড়িতে। নাম টিনা ওঝা। টিনার বাড়ি থেকেই চলছিল তাঁর চিকিৎসা। অসুস্থতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। বুধবার সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

সম্পত্তি বিবাদে ছিন্ন সম্পর্ক

দাদা ও বৌদির সঙ্গে সায়ন্তীর সম্পর্ক আগে থেকেই তিক্ত। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকত। বিবাহিত দিদির সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক বিশেষ ভাল ছিল না। মৃত্যুর পরও সেই সম্পর্কের দূরত্বই দেখা গেল—সায়ন্তীর মৃত্যুসংবাদ জানানো হলেও কেউ দেহ নিতে এগিয়ে এলেন না।

Whatsapp-color Created with Sketch. সেরা খবরগুলো মোবাইলে পেতে এখনই যুক্ত হোন👉🏻
Join Now

বন্ধুর হাত ধরে বাড়ি, কিন্তু বন্ধ ঘরের দরজা

বন্ধুদের হাত ধরে যখন তাঁর দেহ নিজের বাড়িতে ফিরল, তখন দরজা বন্ধ! তালা ঝুলছে বাইরে। কোনও সাড়া নেই ভেতর থেকে। প্রতিবেশীরা বলছেন, ওই সময় দাদা-বৌদি হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। এক করুণ ছবির মতো ছ’ঘণ্টা ধরে রাস্তায় পড়ে ছিল মৃতদেহ।

প্রশাসন এগিয়ে এল, উদ্ধার করল মানবিকতা

শেষ পর্যন্ত রহড়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দাদা শান্তনু দাস ও দিদি সুমিত্রা দে-কে ফোন করা হয় একাধিকবার। কিন্তু তাঁরা কোনও সাড়া দেননি। প্রশাসনের নিয়ম মেনেই শেষে বন্ধুরা, প্রতিবেশী এবং পুলিশ মিলেই সায়ন্তীর মরদেহ পানিহাটি শ্মশানে নিয়ে যান ও সৎকার করেন।

ডেপুটি কমিশনারের প্রতিক্রিয়া

ব্যারাকপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (মধ্য), ইন্দ্রবদন ঝা বলেন, “অত্যন্ত অমানবিক ঘটনা। মেয়েটির শেষ ইচ্ছা ছিল তার দেহ বাড়িতে ফিরুক, বন্ধুরা সে কাজ করেছে। পরিবার যেভাবে মুখ ফিরিয়েছে, তা সমাজকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। শুভবুদ্ধির উদয় হোক।”

এক প্রশ্ন—মানুষ কীভাবে এমন হতে পারে?

একজন রুগ্ন, নিঃসঙ্গ, সমাজবিচ্ছিন্ন নারীর মৃত্যু এবং তার পরের এই পর্ব গোটা সমাজের জন্যই এক আয়না। সম্পর্ক কি কেবল সম্পত্তি, লাভ-ক্ষতির উপর দাঁড়িয়ে? মৃত্যুর মতো চরম সত্য কি এতটাই তুচ্ছ? বন্ধু টিনা ওঝার কথাতেই যেন গলা ধরে আসে—“সায়ন্তীর মৃত্যুসংবাদ শুনেও কেউ পাশে দাঁড়ায়নি, আমরা অসহায় হয়ে দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম…”