ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের মাঝে এবার আরও একধাপ এগোল ইজরায়েল। পরপর ছয় দিন ধরে আকাশপথে ইরানে হামলা চালালেও, সবচেয়ে সুরক্ষিত ফোরডো পরমাণু ঘাঁটির এক চুলও ক্ষতি করতে পারেনি ইজরায়েলি সেনা। আর সেখানেই ঘুঁচে গেল সব হিসেব। তেহরান থেকে ৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কোম শহরের পার্বত্য অঞ্চলের ২০০ ফুট মাটির নিচে লুকিয়ে রয়েছে এই ‘দুর্গ’।
ট্রাম্পের ‘গুপ্তধন’ চাই ইজরায়েল
এই পরিস্থিতিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দারস্থ হলেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। কারণ, ফোরডো গুঁড়িয়ে দিতে চাই Massive Ordnance Penetrator, অর্থাৎ ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা। প্রায় ১৩,৬০০ কেজি ওজনের এই বোমা মাটির নিচে প্রায় ২০০ ফুট গভীর পর্যন্ত গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম। ইজরায়েলের দাবি, পরপর দুটি বাঙ্কার বাস্টার ফেললেই ধ্বংস হয়ে যাবে ফোরডো প্ল্যান্ট।
ফোরডো ধ্বংসেই ইজরায়েলের মিশন শেষ?
অপারেশন রাইজিং লায়ন—শুরু থেকেই এই কোডনেমে হানা দিচ্ছে ইজরায়েল। কিন্তু এখন স্পষ্ট, ইজরায়েল এই গোটা অভিযানের মূল লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে ফোরডো-কে। নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ফোরডো ধ্বংস হলেই থেমে যাবে এই অপারেশন। কিন্তু সেই লক্ষ্যপূরণে দরকার মার্কিন সাহায্য।
যুদ্ধ পরিস্থিতির মাঝে ট্রাম্প যদি সবুজ সঙ্কেত দেন, তবে মার্কিন বোমারু যুদ্ধবিমান থেকেই ছোড়া হতে পারে এই বিধ্বংসী বাঙ্কার বাস্টার। তবে এই পদক্ষেপ মানে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে এক ভয়ানক যুদ্ধের দামামা।
ইরানের দাবি: কিছুই হয়নি
অন্যদিকে ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান মহম্মদ এসলামি দাবি করেছেন, দেশের সমস্ত পরমাণু গবেষণাগার এখনও চালু রয়েছে এবং কোনও ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েনি। এমনকী রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রক মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা জানিয়েছেন, ইজরায়েলের এই হামলা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। ফলে আন্তর্জাতিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে।
কূটনৈতিক চাপ বাড়ছে
এই মুহূর্তে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে ইজরায়েল এবং ইরান কেবল নিজেদের মধ্যে নয়, গোটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই টানছে নিজেদের দিকে। ট্রাম্প যদি সম্মতি দেন, তবে তা শুধু একটি বোমা ফেলার সিদ্ধান্ত হবে না—তা হতে পারে এক ভয়ানক আঞ্চলিক সংঘাতের সূচনা। রাশিয়া ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে তাদের অবস্থান। এখন দেখার, আমেরিকা কী পদক্ষেপ নেয়।
ইজরায়েলের এই বাঙ্কার বাস্টার দাবি শুধু একটা যুদ্ধ কৌশলের ইঙ্গিত নয়, এটা ভবিষ্যতের এক ভয়ঙ্কর বার্তা। মাটির ২০০ ফুট নিচে লুকোনো ফোরডো হয়তো আজ ধ্বংস হয়নি, কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ সেদিকেই এগোচ্ছে। বিশ্ব রাজনীতির চোখ এখন নেতানিয়াহু আর ট্রাম্পের দিকে—তাঁদের সিদ্ধান্তেই নির্ভর করছে, মধ্যপ্রাচ্য আবার নতুন করে রক্তাক্ত হবে কি না।