Indian Politics : বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ে ফের কটাক্ষের সুরে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তিনি সরাসরি নাম করেই বললেন, “দেশের প্রধানমন্ত্রী তো বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন অমিত শাহর উপর। তাহলে ওঁকেই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে দিলেই হয়!”
এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। বিরোধী রাজনীতির পরিসরে এমন মন্তব্য যে কেন্দ্র-বিরোধী সুর আরও চড়াবে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।
মমতার ভাষায়, মোদী শূন্য মঞ্চে একক আধিপত্য শাহের
রাজ্যের প্রশাসনিক সভা থেকে সরাসরি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উদ্দেশে আক্রমণ শানালেন মমতা। তিনি বলেন, “দেশের প্রধানমন্ত্রী কে? একজন বিদেশে, আরেকজন সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন দেশজুড়ে। আপনি দেখছেন, ইডি-সিবিআই কোথায় কোথায় যাচ্ছে? কাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে? সব কিছুর পিছনে কার হাত এটা আর লুকোনো নেই।”
তার দাবি, দেশের সার্বভৌমতাকে ধ্বংস করে একটি মাত্র রাজনৈতিক দলের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করা হচ্ছে। আর তার রাশ কার্যত একজন নেতার হাতেই—অমিত শাহ। মমতার কথায়, “উনিই তো এখন সব ফয়সালা করছেন, তাহলে নামটাই না হয় বদলে দেওয়া হোক।”
বিদেশ সফরকে ঘিরে ঘুরপাক রাজনৈতিক প্রশ্ন
গত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রীর একাধিক বিদেশ সফর নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এবার সেই ইস্যুকেই হাতিয়ার করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “দেশের মানুষের সমস্যা নিয়ে যাঁর মাথাব্যথা নেই, তিনিই কি প্রকৃত প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন? দেশের যুব সমাজ, কৃষক, শ্রমিক, সংখ্যালঘুদের কেউ নিরাপদ নয়। অথচ প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত বিদেশ ভ্রমণে। এটা কি গণতন্ত্রের রীতি?”
তৃণমূলের বার্তা: জনগণের সরকার চাই
মমতার মতে, রাজনীতির কেন্দ্রে থাকা মানে দেশের মানুষের সঙ্গে থাকা। কোনও নেতা যদি নিজের দেশেই অধিকাংশ সময় না থাকেন, তাঁর পক্ষে দেশের বাস্তবতা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, “দেশ চালানো একটা প্যাসপোর্ট স্ট্যাম্পিংয়ের খেলা নয়। এটা দায়িত্ব। এবং সেই দায়িত্ব আজ জনগণ বুঝে গিয়েছে কারা নিচ্ছে আর কারা পালাচ্ছে।”
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মন্তব্য শুধু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নয়—বরং এক সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক বার্তা। আসন্ন লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বার্তা কার্যত বিজেপির ‘ডুয়ো লিডারশিপ’-এর বিরুদ্ধে এক ধরনের পাল্টা আক্রমণ।
বিজেপির পাল্টা কী বলছে
এখনও পর্যন্ত মমতার এই মন্তব্যের কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া বিজেপির তরফে আসেনি। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে বিজেপি নেতারা এই মন্তব্যকে ‘নাটকীয়’ এবং ‘আত্মপ্রচারের চেষ্টা’ বলেই ব্যাখ্যা করেছেন।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই কটাক্ষ সাধারণ রাজনৈতিক ঠাট্টা নয়। এটা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব পরিবর্তন বা আভ্যন্তরীণ ক্ষমতা কাঠামো নিয়ে বিরোধীদের বাড়তে থাকা প্রশ্নের প্রতিচ্ছবি।
উল্লেখ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক মন্তব্য যেমন সাহসী, তেমনি রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী—দু’জনেই বিজেপির প্রধান দুই মুখ। কিন্তু নেতৃত্ব কাকে বলা হবে—এবার সেই প্রশ্নটাই যেন বড় হয়ে দাঁড়াল। আর সেই প্রশ্নে ঘি ঢালল মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য: “যিনি দেশ চালাচ্ছেন, তাঁর নামই ঘোষণা করে দেওয়া হোক।”
গণতন্ত্রের বাস্তব চেহারা বোঝাতে মমতার এই বক্তব্য বিরোধী রাজনীতিতে নতুন মোড় আনবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।